নিজস্ব প্রতিবেদক
শহরের দেয়ালগুলোতে চলছে প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ আর মানুষের সাহসিকতার-বীরত্বের গ্রাফিতি। এসব গ্রাফিতিতে স্থান পাচ্ছে করোনা যুদ্ধে নিহত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অবয়ব ও প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার আহ্বান। গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা গত ১৩ মে থেকে শহরের দেয়ালজুড়ে গ্রাফিতি অঙ্কণ শুরু করেছে।
শনিবারও (১৬ মে) ছিলো কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা। গত ১৩ মে প্রথমে চাষাড়াস্থ হক প্লাজা আর মার্ক টাওয়ার সংলগ্ন দেয়ালে করোনা যুদ্ধের বীর চিকিৎসক মঈন উদ্দিন, পুলিশ কনস্টাবল জসীম উদ্দিন, সাংবাদিক হুমায়ুন কবির, ব্যাংক কর্মকর্তা মুজতবা শাহরিয়ার এই ৪ পেশাজীবীর প্রতি শ্রদ্ধা।
১৪ মে শহরের মন্ডলপাড়া পুল সংলগ্ন বিদ্যুৎ অফিসের দেয়ালে ‘করোনা প্রতিরোধে কেবল মাস্কই নয়, প্রয়োজন শারীরিক দুরত্ব’ এব আহ্বান জানিয়ে সচেতনামুলক গ্রাফিতি অঙ্কণ করা হয়। প্রান-প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষার অহ্বানে ১৫ মে দিনভর ছিল মর্ডান ডায়গোনিষ্ট সেন্টার সংলগ্ন দেয়ালে গ্রাফিতি অঙ্কণ। শনিবার ১৬ মে শহরের চাষাড়াস্থ বালুর মাঠে ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং জলবায়ুর প্রভাব’বিষয়ের ওপর গ্রাফিতি অঙ্কণ করা হয়।
গ্রাফিতি অঙ্কণ প্রসঙ্গে গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন বলেন, করোনার বিরুদ্ধে মানুষ জীবন দিয়ে লড়াই করছে। ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সাংবাদিক, ব্যাংক কর্মকর্তা, গামেন্ট শ্রমিক, শ্রমজীবি মানুষ, ছাত্ররা সরকারের অব্যবস্থাপনায় মারা যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে মানুষের প্রতি সরকারের অবহেলা-দায়িত্বহীনতা মানুষকে চরম হতাশার আর মরিয়ানাপনার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই সময় বাস্তবতাকে একাত্তরের রণাঙ্গনের সাথে তুলনা করলে ভুল হবে না। এদেশের মানুষের জান বাজি রাখা উদ্যোগ করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় মানুষের কাছে আশার প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছে। ব্যাক্তিগত উদ্যোগেই চলছে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এই যুদ্ধে তাদের উদ্যোগ সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশকে আরো ভয়ংকর পরিস্থিতি বাচিঁয়ে দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা স্বপ্ন ও সাহস ছড়িয়ে দিতে চাই। ছড়িয়ে দিতে চাই করোনার বিরুদ্ধে সাধারণ সর্তকতা। মানুষের অসীম সাহস, উদ্যোগ আর জান বাজি রাখা প্রচেষ্টাকে রূপ দিতে চাই শহর জুড়ে দেয়াল চিত্রে। এ কাজ আমরা ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাবো। আমরা মানুষকে সুন্দর পৃথিবীর, সবুজ পৃথিবীর, সাহসের-মর্যাদার জীবনের আহ্বান জানাই। আর এই শহরের দেয়ালগুলো হয়ে থাকবে করেনা কালের স্বাক্ষী! আমাদের ডাক্তার, পুলিশ, সাংবাদিক, ব্যাংক কর্মকর্তা, গামেন্ট শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র-জনতার অসীম সাহসিকতার গল্পগুলো উজ্জ্বীবিত করুক নগরবাসীকে। চাই শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ুক তাদের অসীম সাহসিকতার গল্প, শ্রমিকের হাড়ভাঙ্গা ঘাম আর শ্রমের গল্প, কৃষকের দিগন্ত জোড়া সোনালী ধানের গল্প, প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষার লড়াইয়ের গল্প। করোনা পরবর্তী মানুষ নতুন জীবনের সূচনা করুক, বন-পাহাড়-খাল-বিল রক্ষা করুক। মানুষ মানুষের মতো বাচুঁক। সেই প্রাণবন্ত স্বপ্নের জন্য গণসংহতি আন্দোলন উদ্যোগ নিয়েছে শহরজুড়ে দেয়াল চিত্র অঙ্কনের। শহরের বিভিন্ন দেয়ালে মোট ত্রিশটি গ্রাফিতি অঙ্কণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
গ্রাফিতিগুলো আকঁছে নারায়ণগঞ্জ চারুকলার সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তারা হলেন শিল্পী সাব্বির আহমেদ, শিল্পী রবিন রাপ্পা, শিল্পী আজমেরী সুলতানা আন্নি, নারায়ণগঞ্জ চারুকলার শিক্ষার্থী শিল্পী রাজীব শীল।
গ্রাফিতি অঙ্কণের পাশাপাশি দেয়ালে লেখার কাজে সহযোগিতা করেছে নারায়ণগঞ্জ চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান রিচার্ড, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস জামান। শহরের দেয়ালগুলো গ্রাফিতির জন্য প্রস্তুত করার কাজে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি শুভ দেব, মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ফারহানা মানিক মুনা, মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক তাকবীর হোসেন, জেলা কমিটির সদস্য ইমরান হোসাইন জাহিদ।
দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি করার সময় উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার নির্বাহী সমন্বয়কারী অঞ্জন দাস, নারী সংহতি নারায়ণগঞ্জ জেলার সম্পাদক পপি রানী সরকার।
এসএএইচ